ডুমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি
ভূমিকা
শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার এবং সমাজ গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একটি বিদ্যালয় কেবল পাঠদান ও শ্রেণিকক্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং শিক্ষার্থীদের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার জন্য সহায়ক উপকরণও প্রয়োজন। সেই উপকরণের মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম হলো গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি।
ডুমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলায় অবস্থিত একটি খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চার জন্য একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি সেকশন রয়েছে। এই লাইব্রেরি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সহায়ক গ্রন্থ, গল্প-উপন্যাস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বই এবং সমকালীন জ্ঞান অর্জনের সুযোগ করে দিয়েছে।
লাইব্রেরির ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা
ডুমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ সালে। বিদ্যালয়ের শুরু থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি গ্রন্থাগার গড়ে তোলার আগ্রহ দেখা যায়। প্রথমে কয়েকশত বই নিয়ে একটি ছোট লাইব্রেরি চালু করা হয়। ধীরে ধীরে দাতা, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং আজ এটি একটি পরিপূর্ণ লাইব্রেরি সেকশন হিসেবে গড়ে উঠেছে।
লাইব্রেরির উদ্দেশ্য
ডুমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের লাইব্রেরির মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো:
- শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের বাইরে জ্ঞানার্জনের সুযোগ দেওয়া।
- নিয়মিত পড়াশোনার অভ্যাস গড়ে তোলা।
- সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি করা।
- আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করানো।
- পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় বাস্তব জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করা।
লাইব্রেরির বইয়ের সংগ্রহ
লাইব্রেরিতে বর্তমানে কয়েক হাজার বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। এগুলো বিভিন্ন বিভাগে সাজানো হয়েছে।
- পাঠ্যপুস্তক – ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির সব বই।
- সাহিত্য বিভাগ – বাংলা ও ইংরেজি গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক ইত্যাদি।
- বিজ্ঞান বিভাগ – পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি ও সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সম্পর্কিত বই।
- ইতিহাস ও ভূগোল – বাংলাদেশ ও বিশ্বের ইতিহাস, ভূগোল বিষয়ক বই।
- ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা – ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কিত বই।
- শিশু সাহিত্য – ছোটদের গল্প, ছড়া ও চিত্রভিত্তিক বই।
- রেফারেন্স বই – অভিধান, এনসাইক্লোপিডিয়া, মানচিত্র, সাধারণ জ্ঞানের বই ইত্যাদি।
লাইব্রেরি ব্যবহারের নিয়ম
- শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বই ধার নিতে পারে।
- বই নেওয়ার সময় রেজিস্টারে নাম, শ্রেণি, তারিখ লিখতে হয়।
- বই নষ্ট হলে বা হারিয়ে গেলে জরিমানা দিতে হয়।
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় লাইব্রেরি খোলা থাকে এবং একজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করেন।
শিক্ষার্থীদের উপকারিতা
ডুমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি শিক্ষার্থীদের জন্য নানা দিক থেকে উপকারী ভূমিকা রাখছে।
- অতিরিক্ত জ্ঞানার্জন – পাঠ্যবইয়ের বাইরে নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারছে।
- সৃজনশীল চিন্তাভাবনা – গল্প, উপন্যাস ও কবিতা পড়ে কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- পরীক্ষায় ভালো ফলাফল – রেফারেন্স বই থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
- পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা – নিয়মিত বই পড়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মনোযোগী ও শৃঙ্খলাবদ্ধ হচ্ছে।
- ভাষা দক্ষতা বৃদ্ধি – বাংলা ও ইংরেজি বই পড়ে ভাষাগত দক্ষতা উন্নত হচ্ছে।
আধুনিক প্রযুক্তি ও লাইব্রেরি
বর্তমানে ডুমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ধীরে ধীরে ডিজিটাল সুবিধা যোগ করা হচ্ছে।
- কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে।
- অনলাইন লাইব্রেরি ও ই-বুক ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
- ডিজিটাল ক্যাটালগ সিস্টেম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে সহজে বই খুঁজে পাওয়া যায়।
স্কাউট সেবা ও লাইব্রেরির সম্পর্ক
লাইব্রেরি সেকশন শুধু শিক্ষার্থীদের একাডেমিক জ্ঞানেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি তাদের নৈতিকতা, নেতৃত্ব এবং সেবামূলক কর্মকাণ্ডেও উদ্বুদ্ধ করে। অনেক সময় বিদ্যালয়ের স্কাউট দল লাইব্রেরিতে বই সাজানো, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও নতুন বই প্রচারে সহায়তা করে থাকে।
শিক্ষকদের ভূমিকা
শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত বই নির্বাচন করতে সহায়তা করেন। তারা পাঠ্যপুস্তকের বাইরে গল্প, বিজ্ঞান বা ইতিহাস সম্পর্কিত বই পড়তে উৎসাহ দেন। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতূহল ও জ্ঞানপিপাসা বাড়ে।
চ্যালেঞ্জ
- বইয়ের সংখ্যা এখনও সীমিত।
- ডিজিটাল সুবিধা পুরোপুরি চালু হয়নি।
- অনেক শিক্ষার্থী বই পড়ার অভ্যাসে এখনও অনীহা দেখায়।
- অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে নতুন বই সংগ্রহে সমস্যা হয়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ডুমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় লাইব্রেরি সেকশনকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য কয়েকটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
- ডিজিটাল লাইব্রেরি – অনলাইন বই পড়ার সুযোগ তৈরি করা।
- নতুন বই সংগ্রহ – সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞানের বই বাড়ানো।
- পাঠ প্রতিযোগিতা আয়োজন – শিক্ষার্থীদের বই পড়ায় উৎসাহিত করতে প্রতিযোগিতা চালু করা।
- আরও জায়গা বৃদ্ধি – বৃহত্তর পড়ার কক্ষ তৈরি করা।
- অডিও-ভিজ্যুয়াল সুবিধা – শিক্ষার্থীরা যেন মাল্টিমিডিয়া বই ও ভিডিও লেকচার থেকেও শিখতে পারে।
উপসংহার
ডুমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি সেকশন কেবল একটি কক্ষ নয়; এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার কেন্দ্র। এখানে শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যপুস্তক নয়, বরং সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাধারণ জ্ঞান এবং সমকালীন বিষয় সম্পর্কে জানার সুযোগ পাচ্ছে।
লাইব্রেরির বই শিক্ষার্থীদের মননশীল করে, কল্পনাশক্তি বাড়ায় এবং তাদের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে। ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত সুবিধা ও নতুন বইয়ের সংযোজনের মাধ্যমে ডুমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি একটি আধুনিক জ্ঞানকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।